top of page
Pink Cream
Search

রামকৃষ্ণ পরমহংস: অদ্বৈত বেদান্তের আলোকে এক দিব্য জীবন ও দর্শন

  • Writer: kousik pattanayak
    kousik pattanayak
  • May 15
  • 3 min read

Updated: Sep 5



উনবিংশ শতাব্দীর আধ্যাত্মিক আকাশে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস। অদ্বৈত বেদান্তের গভীর জ্ঞান, তাঁর উদার দর্শন এবং মানবতাবাদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় স্থাপন করেছে। তাঁর জীবন, শিক্ষা এবং দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের সাথে তাঁর সম্পর্ক আজও অগুনতি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবন ও দর্শনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।


শৈশবের দিনগুলি ও শিক্ষার প্রারম্ভ


১৮৩৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি, হুগলি জেলার এক শান্ত গ্রাম কামারপুকুরে জন্মগ্রহণ করেন রামকৃষ্ণ। তাঁর পূর্বের নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে এক অসাধারণ আধ্যাত্মিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। খেলাধুলার চেয়ে দেব-দেবীর প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল অপরিসীম।

তাঁহার প্রথাগত শিক্ষা তেমন না থাকলেও, তিনি গান, যাত্রা এবং কথকতার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। বড় ভাই রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, যিনি ছিলেন একজন বিদ্বান ব্রাহ্মণ, তাঁকে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পথে চালিত করেন। রামকুমারের সান্নিধ্যে গদাধর ধর্মশাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন।




অদ্বৈত বেদান্তের আলোকে রামকৃষ্ণের দর্শন


রামকৃষ্ণ পরমহংসের দর্শন মূলত অদ্বৈত বেদান্তের উপর ভিত্তি করে গঠিত। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে সকল ধর্মই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর বিভিন্ন পথ। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "যত মত, তত পথ" এই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন ধর্মের সারবত্তাকে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলে বিশ্বাস করতেন।


তাঁর দর্শনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল "শিবজ্ঞানে জীবসেবা"। তিনি মনে করতেন প্রতিটি জীবের মধ্যেই শিব অর্থাৎ ঈশ্বরের বাস। তাই মানুষের সেবা করাই ঈশ্বরের সেবা করার সমান। এই ভাবনা মানবতাবাদের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।


রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক যাত্রায় বিভিন্ন গুরুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভৈরবী ব্রাহ্মণী তাঁকে তন্ত্র ও বৈষ্ণব ভক্তিতত্ত্বের গভীর জ্ঞান দান করেন। এরপর তিনি অদ্বৈত বেদান্তের পথে কঠোর সাধনা করেন এবং নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন, যা তাঁর আধ্যাত্মিক উপলব্ধিকে পূর্ণতা দেয়।




বট গাছের নিচে ধ্যানমগ্ন Ramakrishna; পেছনে দেখা যাচ্ছে এক মনোরম মন্দির এবং নদীর পাড়।
বট গাছের নিচে ধ্যানমগ্ন Ramakrishna; পেছনে দেখা যাচ্ছে এক মনোরম মন্দির এবং নদীর পাড়।



দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও রানি রাসমণির অবদান


দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির শুধু একটি উপাসনাস্থল নয়, এটি রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবন ও দর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ১৮৫৫ সালে রানি রাসমণি, একজন ধার্মিক এবং সমাজসেবী নারী, এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।


তৎকালীন সমাজে কালীসাধনা মূলত পুরুষ সাধক ও মহিলা কাপালিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। রানি রাসমণি চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষও যাতে সহজে দেবীর আরাধনা করতে পারে। সেই উদ্দেশ্যে তিনি বিদ্বান ও ধার্মিক ব্রাহ্মণদের পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করেন, যারা অদ্বৈত বেদান্ত ও তন্ত্র সাধনায় পারদর্শী ছিলেন।


প্রথমদিকে রামকৃষ্ণের বড় ভাই রামকুমার চট্টোপাধ্যায় এই মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর রামকৃষ্ণ সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এই মন্দিরটি তাঁর আধ্যাত্মিক চর্চা ও জ্ঞান বিতরণের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।






রামকৃষ্ণের শিক্ষা ও সমাজের উপর প্রভাব


রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিক্ষা সমাজের বিভিন্ন স্তরে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, মানবসেবা ও আধ্যাত্মিক চেতনা বিকাশে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

* ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: তিনি বিভিন্ন ধর্মের মধ্যেকার ভেদাভেদ ঘুচিয়ে এক সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষা মানুষকে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উৎসাহিত করে।

* মানবসেবা: তাঁর শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর "শিবজ্ঞানে জীবসেবা"-র আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেন রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠান আজও আর্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত।


* বঙ্গীয় নবজাগরণ: রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক চিন্তা ব্রাহ্ম সমাজ, আর্য সমাজ এবং অন্যান্য সংস্কার আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর প্রগতিশীল ভাবনা সমাজের কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করেছিল।

* নারীর ক্ষমতায়ন: তিনি মা সারদা দেবীকে শুধু সহধর্মিণী হিসেবে নয়, ঈশ্বরের এক রূপ হিসেবে দেখতেন। তাঁর এই ভাবনা নারীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।



উপসংহার


রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবন ও দর্শন আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর শিক্ষা ধর্মীয় সম্প্রীতি, মানবকল্যাণ ও আত্মিক উন্নতির পথ দেখায়। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে এবং অগণিত ভক্ত ও জিজ্ঞাসুদের শান্তির আশ্রয়স্থল। রামকৃষ্ণের দেখানো পথ অনুসরণ করে আমরা এক উন্নত ও সহানুভূতিশীল সমাজ গঠন করতে পারি।






SEO

* রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনী

* অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন

* দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ইতিহাস

* রানি রাসমণি ও রামকৃষ্ণ

* শিবজ্ঞানে জীবসেবা

* স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ

* রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিক্ষা

* উনবিংশ শতাব্দীর আধ্যাত্মিক সাধক

* ধর্মীয় সহিষ্ণুতা

* কামারপুকুর

Comments


Stay Connected with Us

9679894447

Atberia, Harijhama, Panskura, West Bengal

Pin-721152, India

  • Facebook
  • Instagram
  • X
  • TikTok

© 2035 by samajik Distrikon. Powered and secured by Wix 

bottom of page