top of page
Pink Cream
Search

বাংলার ব্রিটিশ পূর্ব শিক্ষা ব্যবস্থা: জ্ঞান ও ঐতিহ্যের আলোকবর্তিকা

  • Writer: kousik pattanayak
    kousik pattanayak
  • May 12
  • 3 min read

Updated: Sep 5



ভূমিকা


প্রাচীনকালে বাংলা জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাদীক্ষার এক উর্বর ভূমি ছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বে, এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করত। গুরুকুল, পাঠশালা এবং টোলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি ছিল জ্ঞানার্জনের প্রধান কেন্দ্র। বিশেষত, বাংলার ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলি দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, আইন এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে গভীর জ্ঞান দান করত এবং ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রেখেছিল। এই ব্লগ পোস্টে আমরা সেই সময়ের শিক্ষা কাঠামো এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করব।




বাংলার চিরায়ত শিক্ষা কাঠামো


১. গুরুকুল: জ্ঞানার্জনের পবিত্র আশ্রম


গুরুকুল ছিল প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা পদ্ধতির ভিত্তি। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের গুরুর আশ্রমে থেকে বিদ্যা অর্জন করত। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয়, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা এবং জীবনের ব্যবহারিক জ্ঞানও এখানে প্রদান করা হত। দর্শন, গণিত এবং যুদ্ধবিদ্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি গুরুকুলে অধ্যায়ন করা হত।


২. পাঠশালা: প্রাথমিক শিক্ষার প্রাঙ্গণ

গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র ছিল পাঠশালা। এখানে শিশুরা বাংলা বর্ণমালা, প্রাথমিক গণিত এবং ধর্মীয় নীতি শিক্ষা লাভ করত। পাঠশালার শিক্ষকরা ছিলেন সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলি শিক্ষার প্রাথমিক স্তরকে সুদৃঢ় ভিত্তি প্রদান করত।


৩. টোল: উচ্চশিক্ষার বিশেষায়িত কেন্দ্র

টোল ছিল উচ্চশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে মূলত সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য, ন্যায়শাস্ত্র এবং আইনশাস্ত্রের মতো বিষয়গুলি পড়ানো হত। বাংলার বিভিন্ন স্থানে বহু টোল গড়ে উঠেছিল, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে significant ভূমিকা পালন করেছিল।






বাংলার প্রখ্যাত উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র


১. নবদ্বীপ টোল: সনাতন জ্ঞানের পীঠস্থান


* অবস্থান: নদিয়া জেলার নবদ্বীপ, পশ্চিমবঙ্গ। এই স্থানটি একসময় জ্ঞানচর্চার প্রধান কেন্দ্র ছিল।

* বিষয়: ন্যায় (ভারতীয় तर्कशास्त्र), স্মৃতি (হিন্দু আইন), বেদান্ত দর্শন, সংস্কৃত ব্যাকরণ এবং অন্যান্য দার্শনিক তত্ত্ব।

* শিক্ষার্থী: সমগ্র ভারত থেকে পণ্ডিত ও শিক্ষার্থীরা এখানে জ্ঞানার্জনের জন্য আসতেন।

* শিক্ষা ব্যয়: মূলত বিনামূল্যে। স্থানীয় জমিদার ও রাজাদের উদার অনুদানে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হত।

* কর্মসংস্থান: শিক্ষা সমাপনের পর শিক্ষার্থীরা মন্দিরের পুরোহিত, শিক্ষক অথবা রাজদরবারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হতেন।

* অবকাঠামো: সাধারণ মাটির ঘর অথবা আশ্রমের মতো উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা ছিল।

* পৃষ্ঠপোষকতা: স্থানীয় রাজা এবং ধনী জমিদারগণ এই টোলগুলির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।



(গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড: নবদ্বীপ টোল, সনাতন বিদ্যা, ন্যায়শাস্ত্র, স্মৃতি, বেদান্ত, সংস্কৃত ব্যাকরণ, উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র, প্রাচীন শিক্ষা বাংলা।)




গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাতঃকালের কোমল রোদের আলোয় খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পাঠদান, মাটির ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হয়ে পড়ার দৃশ্য। শিক্ষক তাদেরকে আন্তরিকভাবে শিক্ষা দিচ্ছেন।
গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাতঃকালের কোমল রোদের আলোয় খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পাঠদান, মাটির ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হয়ে পড়ার দৃশ্য। শিক্ষক তাদেরকে আন্তরিকভাবে শিক্ষা দিচ্ছেন।


২. ভাটপাড়া টোল: ধর্ম ও দর্শনের আঁতুড়ঘর


* অবস্থান: উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ভাটপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ। এটি ধর্মীয় ও দার্শনিক শিক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিল।

* বিষয়: ধর্মতত্ত্ব, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখা এখানে বিশেষভাবে পড়ানো হত।

* শিক্ষা ব্যয়: এই টোলগুলি মূলত দান ও অনুদানের উপর নির্ভরশীল ছিল।

* কর্মসংস্থান: স্নাতকরা সাধারণত পুরোহিত, জ্যোতিষী বা শিক্ষক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

* অবকাঠামো: মন্দির সংলগ্ন ছোট ছোট গৃহে শিক্ষার্থীদের থাকার ও অধ্যয়নের ব্যবস্থা থাকত।

* পৃষ্ঠপোষকতা: স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।


(গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড: ভাটপাড়া টোল, ধর্মতত্ত্ব, জ্যোতিষশাস্ত্র, হিন্দু দর্শন, প্রাচীন শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা বাংলা।




ree


৩. শান্তিপুর ও সোনারগাঁও শিক্ষাকেন্দ্র: সাহিত্য ও সংস্কৃতির মিলনস্থল


* অবস্থান: শান্তিপুর (পশ্চিমবঙ্গ) এবং সোনারগাঁও (বর্তমানে বাংলাদেশ)। এই দুটি স্থান সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দর্শনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।

* বিষয়: বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃত ভাষা, বৈষ্ণব দর্শন এবং সঙ্গীত এখানে প্রধানত শিক্ষা দেওয়া হত।

* শিক্ষা ব্যয়: মঠ ও ধর্মীয় অনুদানের মাধ্যমে এই কেন্দ্রগুলি পরিচালিত হত।

* কর্মসংস্থান: শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা কবি, লেখক, সঙ্গীতজ্ঞ অথবা ধর্মপ্রচারক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতেন।

* অবকাঠামো: মঠ বা আশ্রমভিত্তিক পরিবেশে শিক্ষাদান করা হত।

* পৃষ্ঠপোষকতা: বৈষ্ণব মতের অনুসারী রাজা ও ধর্মগুরুরা এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।


(গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড: শান্তিপুর শিক্ষাকেন্দ্র, সোনারগাঁও শিক্ষাকেন্দ্র, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃত, বৈষ্ণব দর্শন, সঙ্গীত, প্রাচীন শিক্ষা বাংলা।)



৪. মিথিলা শিক্ষাকেন্দ্র: বাংলার জ্ঞানের প্রভাব


* অবস্থান: মিথিলা অঞ্চল (বর্তমানে বিহার, তবে ঐতিহাসিকভাবে বাংলার সাথে গভীর সংযোগ ছিল)।

* বিষয়: ন্যায় (তর্কশাস্ত্র), মীমাংসা (দার্শনিক বিচার) এবং ধর্মশাস্ত্র (আইন) এখানে প্রধান বিষয় ছিল।

* শিক্ষা ব্যয়: রাজা ও জমিদারদের generous অনুদানে এই শিক্ষা কেন্দ্র চলত।

* কর্মসংস্থান: এখানকার পণ্ডিতরা রাজদরবারে উপদেষ্টা, আইনজ্ঞ বা ধর্মীয় গুরু হিসেবে সম্মানিত হতেন।

* অবকাঠামো: প্রশস্ত হলঘর এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা ছিল।

* পৃষ্ঠপোষকতা: স্থানীয় রাজারা এই কেন্দ্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।



(গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড: মিথিলা শিক্ষাকেন্দ্র, ন্যায়শাস্ত্র, মীমাংসা, ধর্মশাস্ত্র, প্রাচীন শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা বাংলা, ঐতিহাসিক শিক্ষা কেন্দ্র।)





উপসংহার


বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্রগুলি কেবল জ্ঞান বিতরণের স্থান ছিল না, বরং এগুলি ছিল সংস্কৃতি ও সমাজের ভিত্তি। ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, কিন্তু তাদের অবদান এবং ঐতিহ্য আজও বাংলার ইতিহাসে অমলিন হয়ে আছে। এই কেন্দ্রগুলি আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের শিকড় সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করবে।

Comments


Stay Connected with Us

9679894447

Atberia, Harijhama, Panskura, West Bengal

Pin-721152, India

  • Facebook
  • Instagram
  • X
  • TikTok

© 2035 by samajik Distrikon. Powered and secured by Wix 

bottom of page