top of page

কলকাতার জলাবদ্ধতা ও নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা: বৃষ্টির সময় শহরের সমস্যার বাস্তব চিত্র



বর্ষাকাল এলেই শহরের বাসিন্দাদের মনে এক অজানা আতঙ্ক ভর করে। কারণ এক পশলা বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়, যানজট হয় এবং জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। এই জলাবদ্ধতা এখন শুধু একটি মৌসুমি সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের নগর পরিকল্পনার দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি।


🏙️ কলকাতা: কেন জলাবদ্ধতার রাজধানী?


কলকাতার ড্রেনেজ সিস্টেম একসময় বিশ্বের অন্যতম সেরা ছিল, কিন্তু এখন তা জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের প্রাণকেন্দ্র ডালহৌসি, পার্ক স্ট্রিট থেকে শুরু করে বেহালা এবং টালিগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পুরনো ও অপর্যাপ্ত নালাগুলো হয় আবর্জনায় বন্ধ, নয়তো সংস্কারের অভাবে কার্যকারিতা হারিয়েছে। গত ২০২৪ সালের বর্ষায় মাত্র ২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের ১০০টিরও বেশি এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল, যা প্রমাণ করে এই সমস্যা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।


🏞️ শিলিগুড়ি: পাহাড়ি শহরের নিচু সমস্যা


পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শিলিগুড়ি শহরের চিত্রও ভিন্ন নয়। মাটিগাড়া, বাঘাজতিন কলোনি এবং হিলকার্ট রোডের মতো এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা এখন এক নিয়মিত সমস্যা। পাহাড়ি ঢাল থেকে নেমে আসা জল দ্রুত শহরে প্রবেশ করলেও, তার নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। শহরের দ্রুত সম্প্রসারণ হলেও সেই অনুপাতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা তৈরি হয়নি, ফলে সমস্যা কেবল বেড়েই চলেছে।


🏭 আসানসোল: শিল্প শহরের জল সংকট


পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিল্পাঞ্চল আসানসোলের অবস্থাও উদ্বেগজনক। রেলপাড়া, হিরাপুর এবং কালীপাহাড়ির মতো এলাকায় বর্ষাকালে জল জমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং অপর্যাপ্ত ড্রেন ক্লিনিং এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসনের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতা এই জলাবদ্ধতাকে একটি স্থায়ী সমস্যায় পরিণত করেছে।


🛠️ নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা: কোথায় ঘাটতি?


শহরের এই জলাবদ্ধতা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি মূলত মানবসৃষ্ট। এর প্রধান কারণগুলো হলো:


  • সংস্কারের অভাব: নতুন রাস্তা তৈরি হলেও পুরনো ড্রেনগুলো সংস্কার করা হয় না।


  • অপরিকল্পিত নির্মাণ: যত্রতত্র আবাসন ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা জল চলাচলের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে দিয়েছে।


  • ধীরগতির বাস্তবায়ন: 'স্মার্ট সিটি মিশন' বা অন্যান্য নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কিছু কাজ হলেও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর।




📣 সমাধানের পথ: কী করা উচিত?


এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমন:


  • নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: শহরের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং আবর্জনা যাতে নালাতে না জমে সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।


  • নতুন প্রকল্প: শহরের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন জল নিষ্কাশন প্রকল্প চালু করতে হবে।


  • প্রযুক্তি ব্যবহার: GIS Mapping-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলাবদ্ধতার হটস্পটগুলো চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।


  • জনসচেতনতা ও অংশগ্রহণ: শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে, নাগরিকদেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং জল সংরক্ষণে অংশ নিতে হবে।


জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় কারণ হলেও, নগর পরিকল্পনার দুর্বলতা আমাদের শহরগুলোকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।




Comments


bottom of page