top of page
Search

আইসক্রিমের যুগেও অমলিন বাংলার গ্রীষ্মকালীন স্বস্তি: ঐতিহ্যবাহী শীতল পানীয় ও খাবার

  • Writer: kousik pattanayak
    kousik pattanayak
  • May 5
  • 4 min read

Updated: Sep 5

🔍 ভূমিকা


আজ যখন গ্রীষ্মের দাবদাহে আমরা আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয় (কোল্ড ড্রিঙ্কস) এবং রেফ্রিজারেটরের আরামদায়ক শীতলতায় অভ্যস্ত, তখন একবার ভাবুন তো, সেই সময়ে বাংলার মানুষ কীভাবে গরমের মোকাবিলা করতেন, যখন বরফ সংরক্ষণ প্রযুক্তি বা আইসক্রিমের মতো আধুনিক সুবিধা ছিল না? প্রকৃতির কোলে থাকা বিভিন্ন উপকরণ দিয়েই তারা তৈরি করতেন বিশেষ পানীয় ও খাবার, যা শরীরকে শীতল রাখত এবং দিত অনাবিল শান্তি। এই ব্লগ পোস্টে আমরা সেই ঐতিহ্যবাহী গরমের আরামদায়ক পানীয় ও খাবার নিয়ে আলোচনা করব এবং জানাব, কীভাবে এই অমৃতসমান পানীয়গুলি আজও বাড়িতে তৈরি করা যায়।




🎭 ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে বাংলার গ্রীষ্মকালীন শীতল খাবার ও পানীয়


ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বেও বাংলায় গ্রীষ্মের তীব্রতা ছিল। তবে এখানকার মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিজস্ব কিছু কৌশল ও উপকরণ ব্যবহার করে শরীরকে ঠান্ডা রাখতেন। সেই সময়ের কিছু জনপ্রিয় শীতল পানীয় ও খাবার ছিল:


✅ জীবন ঠান্ডা (Jibon Thanda) – নামটিই শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। বিভিন্ন ভেষজ উপাদান মিশিয়ে তৈরি এই শরবত শুধু শরীরের তাপমাত্রা কমাতই না, বরং উৎসাহ ও সতেজতা ফিরিয়ে আনত।


✅ রয়াবজা (Royabja) – আভিজাত্যের ছোঁয়া ছিল এই পানীয়তে। গোলাপের মিষ্টি সুবাস, তরমুজের রসালো ভাব এবং পুদিনার শীতল স্পর্শে তৈরি এই শরবত ছিল গ্রীষ্মের দুপুরে পরম তৃপ্তি।


✅ ইসবগুল শরবত (Isabgul Sarbat) – পেটের সমস্যা গ্রীষ্মকালে বিশেষভাবে দেখা যায়। ইসবগুলের শরবত শুধু তৃষ্ণা নিবারণ করত না, পাচনক্রিয়া উন্নত করতে এবং গ্রীষ্মের অস্বস্তি কমাতেও এটি ছিল দারুণ উপকারী।


✅ গুড়ের শরবত (Gurer Sarbat) – খেজুর গুড় বা আখের গুড়ের মিষ্টি আর ঠান্ডা জলের স্পর্শ যেন মুহূর্তেই শরীর জুড়িয়ে দিত। এই পানীয় শক্তি ও সতেজতা জোগাত, যা গ্রীষ্মের ক্লান্তি দূর করতে অপরিহার্য ছিল।


✅ আম পোড়া শরবত (Aam Pora Sharbat) – গ্রীষ্মের দুপুরে কাঁচা আমের টক-মিষ্টি স্বাদ মন ও শরীর দুটোকেই চাঙ্গা করে তুলত। কাঁচা আম পুড়িয়ে তৈরি এই শরবত গ্রীষ্মের ক্লান্তি দূর করতে এক অসাধারণ পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হত।


✅ বেল শরবত (Bael Panna) – পাকা বেলের মিষ্টি গন্ধ আর ঠান্ডা জলের মিশ্রণ গ্রীষ্মের দুপুরে এনে দিত এক অন্যরকম শান্তি। এই পানীয় হজম শক্তি বৃদ্ধি করত এবং গরমে শরীরকে আরাম দিত।


✅ ডাবের জল (Daab Sharbat) – প্রকৃতির নিজস্ব ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় হল ডাবের জল। গ্রীষ্মের তৃষ্ণা নিবারণে এর জুড়ি মেলা ভার। এটি শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করত।





🥤 কীভাবে বাড়িতে বানানো যায় ঐতিহ্যবাহী শীতল পানীয়?


আধুনিক পানীয়ের ভিড়েও এই ঐতিহ্যবাহী শরবতগুলির স্বাদ ও উপকারিতা আজও অমলিন। আসুন, এদের মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় শরবত তৈরির সহজ পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক:


১. জীবন ঠান্ডা বানানোর রেসিপি

✅ উপকরণ:

* ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল (Golap Jol)

* ১ চা চামচ মধু (Madhu)

* ½ চা চামচ বিট লবণ (Bit Lobon)

* ৫-৬টি পুদিনা পাতা (Pudina Pata)

* ২ কাপ ঠান্ডা জল (Thanda Jol)

✅ প্রস্তুত প্রণালী:

* একটি পাত্রে গোলাপ জল, মধু এবং বিট লবণ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।

* পুদিনা পাতা হাত দিয়ে সামান্য কচলে বা ছোট ছোট টুকরো করে শরবতের সাথে যোগ করুন। এরপর ঠান্ডা জল ঢেলে দিন।

* সমস্ত উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। বরফ কুচি দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।


২. গুড়ের শরবত বানানোর রেসিপি

✅ উপকরণ:

* ২ টেবিল চামচ খেজুর গুড় (Khejur Gur) অথবা আখের গুড় (Akher Gur)

* ১ চা চামচ লেবুর রস (Lebur Ros)

* ১ কাপ ঠান্ডা জল (Thanda Jol)

* ৫-৬টি বরফের টুকরো (Borfer Tukro)

✅ প্রস্তুত প্রণালী:

* প্রথমে খেজুর গুড় অথবা আখের গুড় সামান্য গরম জলে গলিয়ে নিন। এরপর এটিকে ঠান্ডা হতে দিন।

* ঠান্ডা হয়ে গেলে গুড়ের জল একটি গ্লাসে ছেঁকে নিন। এর সাথে লেবুর রস যোগ করুন।

* সবশেষে বরফের টুকরো দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।




তরমুজের টুকরা এবং পুদিনা পাতা দিয়ে সাজানো এক গ্লাস সতেজ তরমুজের জুস, যা গ্রীষ্মের বিকেলে একটি ঠান্ডা ও সতেজ পাণীয়ের জন্য আদর্শ।
তরমুজের টুকরা এবং পুদিনা পাতা দিয়ে সাজানো এক গ্লাস সতেজ তরমুজের জুস, যা গ্রীষ্মের বিকেলে একটি ঠান্ডা ও সতেজ পাণীয়ের জন্য আদর্শ।


  1. ১️⃣ আম পোড়া শরবত (Aam Pora Sharbat)


✅ **উপকরণ:**

- ২-৩টি কাঁচা আম

- ২ টেবিল চামচ গুঁড়ো চিনি বা গুঁড়ো গুঁড়

- ১ চা চামচ ভাজা জিরার গুঁড়ো

- ১/২ চা চামচ বিট লবণ

- ৫-৬টি পুদিনা পাতা

- ঠান্ডা পানি ও বরফ


✅ **প্রস্তুত প্রণালী:**

1. কাঁচা আম **খোলা আগুনে** বা **ওভেনে** পোড়াতে হবে যতক্ষণ না ত্বক কালো হয়ে যায়।

2. ঠান্ডা হলে **ত্বক ছাড়িয়ে** আমের **গুড়ো** বের করে নিতে হবে।

3. আমের গুড়ো **পুদিনা পাতা, ভাজা জিরা, বিট লবণ** ও **চিনি** দিয়ে ব্লেন্ড করুন।

4. ঠান্ডা পানি ও বরফ মিশিয়ে পরিবেশন করুন।


---


  1. ২️⃣ দইয়ের ঘোল (Ghol – Bengali Buttermilk)

✅ **উপকরণ:**

- ১ কাপ টক দই

- ২ কাপ ঠান্ডা পানি

- ১ টেবিল চামচ চিনি

- ১/২ চা চামচ বিট লবণ

- ১ চা চামচ গন্ধরাজ লেবুর রস


✅ **প্রস্তুত প্রণালী:**

1. **দই, পানি, চিনি, লবণ** একসাথে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে।

2. **গন্ধরাজ লেবুর রস** মিশিয়ে ঠান্ডা পরিবেশন করুন।


---


  1. ৩️⃣ বেল শরবত (Bael Panna – Wood Apple Drink)


✅ **উপকরণ:**

- ১টি পাকা বেল

- ২ টেবিল চামচ চিনি

- ১/২ চা চামচ বিট লবণ

- ২ কাপ ঠান্ডা পানি


✅ **প্রস্তুত প্রণালী:**

1. **বেল ভেঙে** তার **গুড়ো** বের করে নিতে হবে।

2. **চিনি, লবণ** ও **পানি** মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে।

3. **ছেঁকে** ঠান্ডা পরিবেশন করুন।


---

  1. ৪️⃣ ডাব শরবত (Daab Sharbat – Tender Coconut Drink)**


✅ **উপকরণ:**

- ১টি ডাবের পানি

- ১ টেবিল চামচ চিনি

- ১ চা চামচ লেবুর রস


✅ **প্রস্তুত প্রণালী:**

1. **ডাবের পানি** একটি গ্লাসে ঢালুন।

2. **চিনি ও লেবুর রস** মিশিয়ে ঠান্ডা পরিবেশন করুন।



🎯 উপসংহার


প্রাচীন বাংলার মানুষ গরমের তীব্রতা থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য প্রকৃতির দান করা বিভিন্ন প্রাকৃতিক পানীয় ও খাবার গ্রহণ করতেন। এই ঐতিহ্যবাহী পানীয়গুলো শুধু শরীর ঠান্ডা রাখত না, বরং পাচনক্রিয়া উন্নত করতে, শরীরে শক্তি যোগাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। আজও এই প্রাকৃতিক রেসিপিগুলো আমাদের গ্রীষ্মকালীন তৃষ্ণা ও ক্লান্তি দূর করতে এক অসাধারণ উপায় হতে পারে। আধুনিক পানীয়ের পাশাপাশি এই ঐতিহ্যবাহী অমৃতগুলির স্বাদ গ্রহণ করে আমরা আমাদের সংস্কৃতির শিকড়ের সাথেও যুক্ত থাকতে পারি।







(কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড : বাংলা ঐতিহ্যবাহী পানীয় (Bangla Oitijjhyobahi Paniye), গ্রীষ্মকালীন শরবত (Grishmokalin Shorbot), জীবন ঠান্ডা (Jibon Thanda), রয়াবজা (Royabja), গুড়ের শরবত (Gurer Shorbot), বাংলার গরমের খাবার (Banglar Goromer Khabar), ঐতিহ্যবাহী শীতল পানীয় (Oitijjhyobahi Shitol Paniye), গ্রীষ্মের তৃষ্ণা নিবারণ (Grishmer Trishna Nibarom)।






Comments


bottom of page