top of page
Search

ভারতের প্রথম ডাকঘরের সন্ধানে: খেজুরির বিস্মৃত ইতিহাস

  • Writer: kousik pattanayak
    kousik pattanayak
  • May 3
  • 3 min read

Updated: 3 days ago


ভারতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনে। সেই সময়ে, ডাক পরিষেবা কেবল চিঠিপত্র আদান-প্রদানই করত না, বরং এটি ছিল ব্রিটিশ প্রশাসন এবং বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি। বঙ্গদেশের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক সময়ের প্রসিদ্ধ বন্দর শহর খেজুরি—ধারণ করে ভারতের প্রথম ডাকঘরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। আসুন, সেই বিস্মৃত ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি।





খেজুরি পোস্ট অফিস: ব্রিটিশ যোগাযোগের ঊষালগ্ন


১৭৭২ সালে খেজুরিতে স্থাপিত হয় ভারতের প্রথম ডাকঘর (Khejuri Post Office)। এই স্থানটি, যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত, ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এই ডাকঘর স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ স্থাপন করা।

১৮৫১ সালে কলকাতা-খেজুরি-ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে প্রথম টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে খেজুরি যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই টেলিগ্রাফ সংযোগ দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানে ব্রিটিশদের সাহায্য করত।

খেজুরি পোস্ট অফিস তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ ছিল। এটি কেবল একটি ডাকঘর ছিল না, বরং ব্রিটিশদের ক্ষমতা এবং অগ্রগতির প্রতীকও ছিল।



দুই অভিযাত্রী শিকারী পোশাক পরে একটি প্রাচীন অঞ্চলে দাঁড়িয়ে আছেন, পেছনে দূরত্বে আরও কয়েকজন ক্যাম্প স্থাপন করছে। তাদের হাতে মানচিত্র ও সরঞ্জাম রয়েছে, চারপাশে বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে তারা নতুন পথচলা পরিকল্পনা করছে।
দুই অভিযাত্রী শিকারী পোশাক পরে একটি প্রাচীন অঞ্চলে দাঁড়িয়ে আছেন, পেছনে দূরত্বে আরও কয়েকজন ক্যাম্প স্থাপন করছে। তাদের হাতে মানচিত্র ও সরঞ্জাম রয়েছে, চারপাশে বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে তারা নতুন পথচলা পরিকল্পনা করছে।



খেজুরি পোস্ট অফিসের কার্যাবলী: যোগাযোগের সেতু


খেজুরি পোস্ট অফিস নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পাদন করত:

* চিঠিপত্র প্রেরণ ও গ্রহণ: ব্রিটিশ ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই ডাকঘর। বাণিজ্যিক চুক্তি, ব্যক্তিগত বার্তা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি এর মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হতো।

* টেলিগ্রাফ পরিষেবা: টেলিগ্রাফ লাইনের মাধ্যমে দ্রুত বার্তা প্রেরণ করা যেত, যা ব্যবসার লেনদেন এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ছিল।

* বাণিজ্যিক ডাক পরিষেবা: খেজুরির বন্দরের মাধ্যমে যে পণ্যসামগ্রী আমদানি ও রপ্তানি হতো, সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং তথ্য দ্রুত সরবরাহের জন্য এই ডাকঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

* সরকারি প্রশাসনিক কার্যক্রম: ব্রিটিশ সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যেকার যোগাযোগ এবং নির্দেশাবলী আদান-প্রদানের প্রধান মাধ্যম ছিল খেজুরি পোস্ট অফিস।




একটি ক্লাসিক স্থাপত্যের বিল্ডিং, যা প্রাচীন যুগের ইউরোপীয় ডিজাইন দ্বারা অনুপ্রাণিত। চারটি স্তম্ভ বিশিষ্ট ফ্যাসেড সহ সজ্জিত, ছাদের উপরে একটি ছোট পতাকা উড়ছে। চারপাশে উঁচু গাছপালা দেখা যায়, যা সমগ্র চিত্রটিকে একটি ঐতিহাসিক এবং শান্তিময় পরিবেশ প্রদান করেছে।
একটি ক্লাসিক স্থাপত্যের বিল্ডিং, যা প্রাচীন যুগের ইউরোপীয় ডিজাইন দ্বারা অনুপ্রাণিত। চারটি স্তম্ভ বিশিষ্ট ফ্যাসেড সহ সজ্জিত, ছাদের উপরে একটি ছোট পতাকা উড়ছে। চারপাশে উঁচু গাছপালা দেখা যায়, যা সমগ্র চিত্রটিকে একটি ঐতিহাসিক এবং শান্তিময় পরিবেশ প্রদান করেছে।


স্থাপত্যের নীরব সাক্ষী: খেজুরির বর্তমান চিত্র


খেজুরি পোস্ট অফিসের স্থাপত্য ছিল типичный ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৈলীর প্রতিফলন। ইটের তৈরি মজবুত কাঠামো, কাঠের অভ্যন্তরীণ সজ্জা এবং প্রশস্ত দরজা-জানালা সেই সময়ের স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য বহন করত। কালের প্রভাবে আজ সেই ভবন ভগ্নপ্রায়, তবে এর কিছু অবশিষ্টাংশ এখনও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

দুঃখের বিষয় হলো, এই ঐতিহাসিক স্থানটি বর্তমানে সরকারিভাবে কোনো জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত নয়। তবে স্থানীয় ইতিহাস ஆர்வীরা এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।




খেজুরির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাণিজ্য ও সংযোগের কেন্দ্র



খেজুরি এককালে একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ বন্দর ছিল। ডাচ, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা নিয়মিতভাবে এখানে বাণিজ্য করতে আসতেন। এই বন্দরের মাধ্যমে পাট, চা, কাচ এবং মশলার মতো মূল্যবান পণ্য রপ্তানি করা হতো।

* ১৮৫১ সালের টেলিগ্রাফ সংযোগ: ভারতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল, যা খেজুরিকে দ্রুত যোগাযোগের মানচিত্রে স্থান দিয়েছিল।

* ব্রিটিশ সামরিক ও ব্যবসায়িক ঘাঁটি: খেজুরি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ব্রিটিশরা এটিকে সামরিক এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়ক ছিল।

* বাংলার সমুদ্রপথে আধিপত্য: কলকাতা এবং খেজুরির মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সংযোগ ব্রিটিশদের বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপথে আধিপত্য বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল।



খেজুরিতে কিভাবে পৌঁছাবেন:


* বিমান: নিকটতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কলকাতা)। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে করে খেজুরি যাওয়া যায়।

* রেল: নিকটতম রেলস্টেশন হল কাঁথি রোড স্টেশন। স্টেশন থেকে খেজুরি পর্যন্ত লোকাল বাস বা গাড়ি পাওয়া যায়।

* সড়ক: কলকাতা থেকে NH16 ধরে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার গাড়ি পথে খেজুরিতে পৌঁছানো সম্ভব।



নিকটবর্তী ঐতিহাসিক স্থানসমূহ:


খেজুরির আশেপাশে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যা ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করতে পারে:

* হিজলি ফোর্ট: এক সময়ের ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি, যা বর্তমানে আইআইটি খড়গপুর হিসেবে পরিচিত।

* ডায়মন্ড হারবার: ব্রিটিশ আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও বাণিজ্য কেন্দ্র।

* তাম্রলিপ্ত (তমলুক): প্রাচীন এবং ব্রিটিশ আমলের একটি প্রসিদ্ধ বন্দর নগরী।

* ডাচ সেমেট্রি (চুঁচুড়া): চুঁচুড়ায় অবস্থিত ডাচ ঔপনিবেশিকদের কবরস্থান, যা সেই সময়ের ইতিহাস বহন করে।



উপসংহার: ইতিহাসের নীরব সাক্ষী


খেজুরি পোস্ট অফিস কেবল ভারতীয় ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রারম্ভিক বিন্দু ছিল না, এটি ছিল ব্রিটিশ বাণিজ্যিক কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আজ, কালের গর্ভে তার জৌলুস মলিন হলেও, এই ঐতিহাসিক স্থানটি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আধুনিক ডাক সংযোগ স্থাপনের নীরব সাক্ষী হিসেবে আজও বিদ্যমান। খেজুরির হারানো ইতিহাস আমাদের ঔপনিবেশিক শাসনের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বাণিজ্যের গতিপথ সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।





(প্রথম ভারতীয় ডাকঘর (prothom bharatiyo daakghor), খেজুরি পোস্ট অফিস (khejuri post office), ব্রিটিশ আমলের ডাক ব্যবস্থা (british amoler daak byabostha), টেলিগ্রাফ সংযোগ (telegraph songjog), ভারতীয় ডাক যোগাযোগ ইতিহাস (bharatiyo daak jogajog itihaas))

Comments


bottom of page