top of page
Search

INS Vikrant (R11): ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরীর বীরগাথা ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধ

  • Writer: kousik pattanayak
    kousik pattanayak
  • May 8
  • 3 min read

ভূমিকা


ভারতের নৌ ইতিহাসে INS Vikrant (R11) এক কিংবদন্তী নাম। দেশের প্রথম বিমানবাহী রণতরী হিসেবে এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতাকে নতুন দিগন্তে উন্মোচন করেছিল। বিশেষত ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এই রণতরীর অনবদ্য ভূমিকা ভারতের বিজয়কে আরও সুনিশ্চিত করেছিল। এই ব্লগ পোস্টে আমরা INS Vikrant-এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এর সামরিক ক্ষমতা, ইন্দো-পাক যুদ্ধে এর অবদান এবং কিভাবে পাকিস্তানের অত্যাধুনিক সাবমেরিন PNS Ghazi এটিকে ধ্বংস করতে এসে নিজেই ডুবে গিয়েছিল, সেই রোমাঞ্চকর কাহিনী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।



বিমানবাহী রণতরীর ডেকে থেকে যাত্রা শুরু করছে একটি যুদ্ধবিমান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশে সতর্ক সৈন্যরা।
বিমানবাহী রণতরীর ডেকে থেকে যাত্রা শুরু করছে একটি যুদ্ধবিমান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশে সতর্ক সৈন্যরা।


INS Vikrant: জন্মকথা ও ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি


INS Vikrant-এর নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির জন্য, যার নামকরণ করা হয়েছিল HMS Hercules। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ব্রিটেন আর এটিকে কমিশন করেনি। দূরদর্শী ভারত সরকার ১৯৫৭ সালে এই রণতরীটি কিনে নেয়। দীর্ঘ প্রস্তুতি ও আধুনিকীকরণের পর ১৯৬১ সালে INS Vikrant ভারতীয় নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করে, যা ভারতের সামুদ্রিক ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।


INS Vikrant-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য


INS Vikrant ছিল তৎকালীন সময়ের এক অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্পেসিফিকেশন নিচে উল্লেখ করা হলো:

* ওজন: স্ট্যান্ডার্ড ১৬,০০০ টন, পূর্ণ লোড ১৯,৫০০ টন

* দৈর্ঘ্য: প্রায় ২১০ মিটার (৭০০ ফুট)

* প্রস্থ: প্রায় ৩৯ মিটার (১২৮ ফুট)

* ড্রাফট: ৭.৩ মিটার (২৪ ফুট)

* ইঞ্জিন: ২ × Parsons গিয়ারড স্টিম টারবাইন, মোট ৪০,০০০ আইএইচপি (৩০,০০০ কিলোওয়াট)

* সর্বোচ্চ গতি: ২৫ নটস (৪৬ কিমি/ঘণ্টা)

* কার্যকরী পাল্লা: ১৪ নটসে ১২,০০০ নটিক্যাল মাইল

* বিমান বহনের ক্ষমতা: ২১-২৩টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল Hawker Sea Hawk এবং Breguet Alizé।

* ক্রু সদস্য: ১,১১০ জন (বিমান কর্মী সহ)

* অস্ত্রশস্ত্র: ১৬টি ৪০মিমি বোফোর্স অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান (পরবর্তীতে ৮টিতে হ্রাস করা হয়)।

* ফ্লাইট ডেক: প্রথমে ক্যাটাপল্ট সিস্টেম এবং পরবর্তীতে স্কি-জাম্প র‍্যাম্প যুক্ত করা হয়।



১৯৭১ সালে বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর অবস্থান এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় শহরগুলির মানচিত্র।
১৯৭১ সালে বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর অবস্থান এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় শহরগুলির মানচিত্র।

১৯৭১ সালের যুদ্ধে INS Vikrant-এর অসামান্য অবদান


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে এক স্বর্ণালী অধ্যায়। এই যুদ্ধে INS Vikrant পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সমুদ্রপথে এক শক্তিশালী অবরোধ তৈরি করে। এর বিমানগুলি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও খুলনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে একের পর এক সফল হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে কার্যত পঙ্গু করে দেয়।



গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান ও সাফল্য


* চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রাম বন্দর ছিল পাকিস্তানের প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র। INS Vikrant থেকে উড়ে আসা Hawker Sea Hawk যুদ্ধবিমানগুলি এই বন্দর গুঁড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়।

* কক্সবাজারে আঘাত: কক্সবাজারে Vikrant-এর বোমারু বিমানগুলির হামলায় পাকিস্তানি সৈন্যদের চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

* খুলনা ও মংলায় বিধ্বংসী হামলা: এই বন্দরগুলিতে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর জ্বালানি ও অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল।

PNS Ghazi: পাকিস্তানের দুঃসাহসিক কিন্তু ব্যর্থ প্রচেষ্টা

INS Vikrant-এর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা উপলব্ধি করে পাকিস্তান এটিকে ধ্বংস করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা তাদের সবচেয়ে আধুনিক সাবমেরিন PNS Ghazi-কে এই বিপজ্জনক মিশনে পাঠায়।



গভীর সমুদ্রের গভীরে, রহস্যময় পরিবেশে এক সাবমেরিন শান্তভাবে তার পথ চলেছে।
গভীর সমুদ্রের গভীরে, রহস্যময় পরিবেশে এক সাবমেরিন শান্তভাবে তার পথ চলেছে।

PNS Ghazi-র রহস্যময় পরিণতি


পাকিস্তান ভেবেছিল INS Vikrant হয়তো বিশাখাপত্তনম বন্দরে অবস্থান করছে। কিন্তু ভারতীয় নৌবাহিনী চালাকি করে এই তথ্য গোপন রাখে এবং Vikrant কে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি মোতায়েন করে। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১, রহস্যজনক পরিস্থিতিতে PNS Ghazi বিশাখাপত্তনমের উপকূলে ডুবে যায়। এর কারণ আজও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন, তবে মনে করা হয় এটি হয়তো অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ অথবা ভারতীয় নৌবাহিনীর পাতা গভীর জলের মাইনের শিকার হয়েছিল। PNS Ghazi-র ডুবে যাওয়া ছিল পাকিস্তানের জন্য এক বিশাল ধাক্কা।




সমুদ্রের বুকে ভাসমান একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, যার ডেকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান সারি বেধে দাঁড়িয়ে আছে। এই চিত্রটি যুদ্ধজাহাজের গৌরবময় ইতিহাসের প্রমাণ বহন করে।
সমুদ্রের বুকে ভাসমান একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, যার ডেকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান সারি বেধে দাঁড়িয়ে আছে। এই চিত্রটি যুদ্ধজাহাজের গৌরবময় ইতিহাসের প্রমাণ বহন করে।


INS Vikrant-এর অবসর ও legado


দীর্ঘ এবং গৌরবময় কর্মজীবনের পর ১৯৯৭ সালে INS Vikrant কে অবসর দেওয়া হয়। জাহাজটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় এর রক্ষণাবেক্ষণ ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠছিল। পরবর্তীতে এটিকে মুম্বাইতে একটি জাদুঘর হিসেবে রাখার পরিকল্পনা করা হলেও, ২০১২ সালে অর্থনৈতিক কারণে এটিকে ভেঙে ফেলা হয়।



উপসংহার


INS Vikrant শুধু একটি যুদ্ধজাহাজ ছিল না, এটি ছিল ভারতের সাহস, শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে এর বীরত্বগাথা ভারতীয় নৌবাহিনীকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতের বিমানবাহী রণতরী নির্মাণের জন্য এক শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে। INS Vikrant-এর ইতিহাস চিরকাল ভারতীয়দের হৃদয়ে অমলিন থাকবে।







(উপযুক্ত ওয়ার্ড ("INS Vikrant", "ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরী", "১৯৭১ সালের যুদ্ধ", "PNS Ghazi", "ভারতীয় নৌবাহিনী", "বিমানবাহী রণতরী", "ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ")





Comments


bottom of page